২১ ফেব্রুয়ারি
১৯৫২ সালের ঐতিহাসিক দিন
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
UNESCO স্বীকৃত
ভাষা শহীদ
সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউর
শহীদ মিনার
ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিস্তম্ভ
১৯৫২ সালের ঐতিহাসিক দিন
UNESCO স্বীকৃত
সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউর
ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিস্তম্ভ
১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়। পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) মানুষের মাতৃভাষা ছিল বাংলা। কিন্তু পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার ষড়যন্ত্র শুরু করে। ১৯৪৮ সালে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকায় এসে ঘোষণা করেন "Urdu and only Urdu shall be the state language of Pakistan"।
১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ ভাষার দাবিতে প্রথম হরতাল পালিত হয়। ১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন পুনরায় উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দেন। এর প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ৪ ফেব্রুয়ারি প্রতিবাদ সভা করে এবং ২১ ফেব্রুয়ারি প্রদেশব্যাপী হরতাল আহ্বান করে।
সরকার ১৪৪ ধারা জারি করে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। কিন্তু ছাত্র-জনতা ১৪৪ ধারা ভেঙে রাজপথে নেমে আসে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে পুলিশ নিরস্ত্র ছাত্রদের উপর গুলি চালায়। এতে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউর সহ অনেকে শহীদ হন।
আবুল বরকত: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন।
রফিকউদ্দিন আহমদ: মানিকগঞ্জের বাসিন্দা। ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে গুলিতে শহীদ হন।
আবদুল জব্বার: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ২১ ফেব্রুয়ারি গুলিবিদ্ধ হয়ে ২২ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।
শফিউর রহমান: হাইকোর্টের কর্মচারী। ২১ ফেব্রুয়ারি গুলিতে শহীদ হন।
আবদুস সালাম: ঢাকার বাসিন্দা। ২১ ফেব্রুয়ারি গুলিতে শহীদ হন।
ভাষা শহীদদের স্মরণে ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে প্রথম শহীদ মিনার নির্মিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৫৭ সালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ শুরু হয় এবং ১৯৬৩ সালে সম্পন্ন হয়। প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি প্রভাতফেরিতে মানুষ শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়।
১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর UNESCO ২১ ফেব্রুয়ারিকে "আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস" হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ২০০০ সাল থেকে সারা বিশ্বে এই দিনটি পালিত হচ্ছে। এটি বাঙালি জাতির জন্য অত্যন্ত গৌরবের বিষয়।
ভাষা আন্দোলন বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তি স্থাপন করে। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালিরা প্রথমবারের মতো ঐক্যবদ্ধভাবে পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। ভাষা আন্দোলন পরবর্তীতে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পথ প্রশস্ত করে। এটি বিশ্বের একমাত্র ভাষা আন্দোলন যেখানে মানুষ তাদের মাতৃভাষার জন্য জীবন দিয়েছে।
আবদুল গাফফার চৌধুরী রচিত "আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি" গানটি ভাষা আন্দোলনের প্রতীক হয়ে উঠেছে। আলতাফ মাহমুদের সুরে এই গানটি প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি প্রভাতফেরিতে গাওয়া হয়।